স্বদেশ ডেস্ক:
টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পিকে হালদার) সব পলাতক ও সাজাপ্রাপ্ত আসামির বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার ও পুনঃপ্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। দুদকের করা এক আবেদন শুনানি নিয়ে আজ বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এর আগে বুধবার সকালে পলাতক পিকে হালদারের গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার, সংবাদ প্রচার ও পুনঃপ্রচার বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। আবেদনে তথ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রতি এমন নির্দেশনা দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) পিকে হালদারের প্রচারিত সাক্ষাৎকার এবং প্রচারিত টকশোর ভিডিও ক্লিপ আদালতে তলব চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
আদালতে আজ দুদকের করা আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যাদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুদকের আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। আদালত এ বিষয়ে লিখিত আবেদন দিতে বলেন। সে অনুসারে বুধবার লিখিতভাবে এ আবেদন করা হয়।
গত ১৮ নভেম্বর ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেপ্তার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ অনুসারে, দুদক গত ২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক।
এরপর ৯ ডিসেম্বর পিকে হালদারের কাজিন পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারী এবং পিকে হালদারের সাবেক সহকর্মী ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দীকে আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে পিকে হালদারের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে আগামী ৩ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর দুদক আইনজীবী জানিয়েছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে দেশে ফিরতে প্রশান্ত কুমার হালদার এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের কাছে একটি পত্র দেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। তিনি কখন কীভাবে আসবেন গত ৭ সেপ্টেম্বর তা জানাতে বলেছিলেন আদালত। পরে ২০ অক্টোবর একটি আবেদন করে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘ্নে দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং ২৫ অক্টোবরের একটি টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়।
গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এ বিষয়ে এই আদেশ দেন। আদেশে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে বলা হয়। পরে তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন অথরিটিরি চিফ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কিন্তু ২৪ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানান, পিকে হালদার ২৫ অক্টোবর রোববার দেশে ফিরছেন না। এরপর গত ২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়।